আজ বিন্দু কাল বিসর্গ

সব কিছুই বদলে যায়
এই যেমন ধরা যাক ইংরেজদের শাসন কালে বাঙ্গালিরা কদাচিৎ ইংরাজি ভাষা নিয়ে কোনো মাতামাতি করত না। তখন মানুষ নিজেদের বাঙালি হওয়াতে গর্ব বোধ আর সাহিত্যে যুগান্তকারি কিছু লেখনি লিখতে পারত। তাদের মধ‍্যে বিন্দুমাত্র বিদেশি দ্রব‍্য, ভাষা, আচার বিচার, বেশভূষা অথবা চরিত্র নিয়ে মাথাব্যথা ছিলনা আর এইসবে মশগুল হওয়া ছিল নৈব নৈব চ। তখন মানুষ একত্রিত হয়ে কৌশল আদান প্রদান করত যাতে তারা ইংরেজদের বিদেয় করতে সক্ষম হয়। বিনয় আদানপ্রদান আর একে অপরের সুখ‍্যাতি করতেই মানুষের দিন পেরোতো। সংসারে থাকত এক ভালোবাসার পরিবেশ যেখানে তাদের সম্মান দেওয়া থেকে ফেরত পাওয়া অবদি একটা চক্র সম্পূর্ণ হতো। মানুষ শিক্ষায় মেতে থাকত যা তাদের মস্তিষ্ককে আরো উর্বর করে তুলত, জ্ঞানের বৃদ্ধি আরো তাদের চরিত্রকে উন্নততর করে তুলত। ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধ করার সাহস আর আবেগ এই বাংলা মাটির শিক্ষাই বাঙ্গালিকে তুলে ধরল। তারপর বিকেল ঘনিয়ে যখন সকাল হলো, দেশ স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ পেল তখন সবাই বুঝতে পারলনা তারা কতটা ভাগ‍্যবান, তারা কতটা বড় জয়লাভ করে এই মুহুর্তে পৌছেছে। তারা সরকার গঠনের দিকে চেয়ে রইল, যে সরকার তৈরি হয়ে গেলে প্রত‍্যেক বাঙালির ভাগ‍্য পালটে যাবে। এরপর দেখতে দেখতে সংবিধান তৈরি হল, প্রজাতন্ত্র হয়ে উঠল ভারত আর গরিব বড়লোক সবাই এই উপলব্ধিকে স্বাগত জানাল। জানিনা সরকার গঠন হওয়া ভালো ছিল না কি ইংরেজদের শাসন বহাল থাকাটা। কেউ কিছুই জানতে বা বুঝতে পারলনা। এরপর ইংরেজদের তৈরি করা সব কারখানা, রেল, দূরভাষ সব সরকার নিজের দায়িত্বে নিয়ে নিল। এল নতুন কিছু করার প্রতিজ্ঞা কিন্তু যা হলো তা মোটেও সুখের রইলনা। পাশ্চাত্য দেশের অভ‍্যেস (যদিও ইংরেজরা আর নেই রাজত্বে) অবলিলায় সবাই গ্রহন করে ফেললো। বেশভূষা, কথা বলার ঢং, আহারাদি, আচারবিচার সব ধিরে ধিরে পালটে যেতে লাগল। এলো টকিজ, চলচ্চিত্র তৈরি হলো। বিদেশিদের মত করে শিক্ষা ব‍্যবস্থার উতপত্তি ঘটল। সব বাঙ্গালিদের আচারবিচার পালটে যেতে লাগল এমনকি সাহিত‍্যতেও ইংরেজি শব্দের ব‍্যবহার ক্রমশ বেড়েই যেতে লাগল। আজ একবিংশ শতাবদিতে পা রেখে শেষের কবিতা, বর্ণপরিচয়, সহজ পাঠ, হযবরল, বিন্দুর ছেলে, অপুর সংসার সব রসাতলে তলিয়ে যেতে দেখছি। আগে ছিল পূর্ণছেদ, এখন এসেছে বিন্দু, যার বিন্দুমাত্র বিদেয় হওয়ার কোন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছেনা। শুধু এইটুকুই বলা যাচ্ছে, হয়ত বাঙ্গালিদের সাহিত্য, সংস্কৃতি, আচার আচরণ অন‍্য সব সভ‍্যদের চেয়ে উন্নতমানের ছিল তাই তারা আজও লিখতে পারে, গল্প বলতে পারে। যারা বখে গেছে, তারা হয়ত আপ্রাণ চেষ্টা করছে এখনও, তেল আর জলকে মেশাতে!

Comments

Popular posts from this blog

The tyred life

Fibre